প্রথমবারের মতো নোবেল প্রাইজ সম্মেলনের পর গত বৃহস্পতিবার ১০ জন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদ এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর প্রতি। নোবেলবিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী, ভৌত রসায়নবিদ, অর্থনীতিবিদ ও অন্যান্য। তাদের বক্তব্য, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ব্যর্থতা, প্রকৃতি বিনাশ ও অন্যান্য বৈশ্বিক সঙ্কট রীতিমতো হুমকির সৃষ্টি করেছে মানবজাতির জন্য। এই বিবৃতিতে বিশ্বের শীর্ষ ২০টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও স্বাক্ষর করেছে। করোনার মতো আরও মহামারী ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। উৎপাদন, বিতরণ ও ভোগব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবকিছুতে ব্যাপক পরিবর্তনই কেবল সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে মানবজাতি ও বিশ্বকে। এজন্য তারা ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বাস্তবায়নসহ গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে এবং দেড় ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার আকুল আহ্বান জানান। তবে সেজন্য উন্নত দেশগুলোকে জরুরীভিত্তিতে কার্বন নিঃসরণ কমানোসহ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈশ্বিক প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ এবং জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করোনা মহামারীর সার্বিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠে সর্বস্তরের মানুষ কবে নাগাদ সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে সেটি একটি বহুল উচ্চারিত অমূল্য প্রশ্ন। আদৌ ফিরে আসতে পারবে কি না সে বিষয়টিও খুবই অনিশ্চিত। কেননা, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর যে চারিত্র্যলক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান তাতে প্রতীয়মান হয় যে, সহজে এই আপদ বিদায় নেবে না বিশ্ব থেকে। এমনকি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও এর বহুল সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাবে। বার্ড-ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ইবোলা ভাইরাস, এইচআইভি-এইডস, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, নিপা ভাইরাস ইত্যাদির মতোই মানুষকে প্রায় চিরদিন বহন করে বেড়াতে হবে করোনাভীতিও। সেক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে যে, করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক চেহারা ও পুনর্বিন্যাস কখনই আর আগের মতো হবে না। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবেও উঠে এসেছে বিষয়টি। সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি বলছে, দুই বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী এমন সমূহ সঙ্কট খুব কমই দেখা গেছে। বরং কোভিড-১৯ তার থেকেও অনেক বেশি এবং সার্বিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে বিশ্বকে, যা গত ৭৫ বছরের ইতিহাসেও দেখা যায়নি। পৃথিবীজুড়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সমাজ, অর্থনীতি, বাণিজ্য, পর্যটন, উৎপাদন ব্যবস্থা প্রায় সবই বিপর্যস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন হয়েছে করোনা মহামারীতে। অগণিত মানুষের মৃত্যুসহ স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতার বাইরে সমূহ ক্ষতির তালিকায় রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের জীবন-জীবিকা, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও শিক্ষা, সর্বোপরি উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান। ফলে প্রায় সর্বত্র দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি ও পরিবেশ। বহুধা বিস্তৃত এই ক্ষয়ক্ষতির মোকাবেলা করে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ এবং এর ক্ষতিসমূহ কাটিয়ে উঠতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতি জরুরী এবং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ১০ নোবেলবিজয়ীর সতর্কবার্তায় বিশ্ব ও মানবজাতির জন্য সেই আশঙ্কাই প্রতিফলিত হয়েছে।
Leave a Reply